• ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১০ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতায় গেলে প্রথম ৬ মাসের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, জানাল বিএনপি

দৈনিক সোনালী সিলেট
প্রকাশিত জুন ৪, ২০২৫
ক্ষমতায় গেলে প্রথম ৬ মাসের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, জানাল বিএনপি

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনে বা ছয় মাসের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, তা ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলের এই কর্মপরিকল্পনার একটা সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দলের বক্তব্যে তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া ছিল সীমিত। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মানুষের আস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি গড়তে প্রয়োজন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। গতানুগতিকতা ছেড়ে সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তাহলেই জাতির জন্য আশা, আস্থা ও পুনর্গঠনের দিগন্ত উন্মোচন হবে। বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে কী কী কাজ করবে তার পরিকল্পনা প্রকাশ করে। জনগণের ক্ষমতায়নের দল হিসেবে বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি বাস্তব সম্মত সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে চায়। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮০ দিনের  ছয় মাস মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্বাচনের আগেই নির্ধারণ করা হবে। এই ১৮০ দিনের পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন সেক্টরে বিএনপি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, আমরা সেগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাই। দলের ১৮০ দিনের ভেতরে শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থসেবা, নারীর ক্ষমতায়, শহিদদের স্বীকৃতি, কৃষিখাত ও গ্রামীন উন্নয়ন, শিল্পখাত, তথ্য প্রযুক্তিখাত, প্রবাসী কল্যাণ, নগর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা এই ১১টি খাতকে বিএনপি অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে করণীয় ঠিক করার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি প্রধান অঙ্গীকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকার গঠন করলে বিএনপি এক কোটি মানুষের জন্য নতুন কর্মের সংস্থান করবে। অতীতেও বিএনপির এই সাফল্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকাকালীন উন্নয়ননীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল শ্রমঘন শিল্প স্থাপন করা। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত শ্রমকে বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া। এতে করে নতুন নতুন মানুষের কর্মের সংস্থান হয়েছে। শুধু তাই নয়, জনমানুষ এক শ্রমবাজার থেকে আরেক শ্রমবাজারে প্রবেশও করেছে। যেমন পোশাকশিল্পের বিকাশের কারণে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ শ্রমবাজার থেকে মানুষজন পোশাক কারখানার শহরের দিকে যেতে শুরু করে। সাধারণ মানুষের আয়বৃদ্ধির পাশাপাশি শহুরে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ শুরু হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সার্বিক উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের জন্য বিএনপি এবার দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮ শতাংশ। মূলত ১০টি খাতকে সার্বিক উন্নয়ন তথা কর্মসংস্থানের জন্য বিএনপি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এগুলো হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষি, বিদেশে শ্রম রপ্তানি, আইসিটি ও ফ্রিল্যান্সিং, সেবাখাত, সবুজ জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং অন্যান্য।

শিক্ষাকে অগ্রাধিকার

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। দেশের ও প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, ডেন্টাল হাইজেনিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ইত্যাদির স্বল্পমেয়াদি ‘ট্রেড কোর্স’ চালু করা হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করতে এপ্রেন্টিসশিপ, ইন্টার্নশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জেলা পর্যায়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেটিভ বিজনেস আইডিয়া বাণিজ্যিকিকরণ করতে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় সিড ফান্ডিং বা ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রদান করা হবে।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরির একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্যানিটেশন এবং পুষ্টির উপর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্পেশালাইজড ট্রেনিং স্কিম শুরু করা হবে। নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য আধুনিক পরিশোধন ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী রিসার্ভার তৈরী করা হবে।