• ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেটে অসহনীয় গরম ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিস্ট নগরবাসী

দৈনিক সোনালী সিলেট
প্রকাশিত জুন ১৫, ২০২৫
সিলেটে অসহনীয়  গরম ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিস্ট নগরবাসী

পবিত্র ঈদ উল আযহার আগের দিন থেকে শুরু হওয়া গরমের তীব্রতা অসহনীয়  লোডশেডিং জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত। গরমে ঘন ঘন বিদ্যুৎ সংকটে না ঘরে স্বস্তি না বাইরে বেরুনো যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই পরিস্থিতি আরো কষ্টকর। সিলেটে গত সপ্তাহ দিন ধরে তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। এ ক’দিন প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। গ্রামাঞ্চলে এ অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গত তিন-চারদিন ধরে সিলেটে আবারো শুরু হয়েছে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং। একদিকে প্রচন্ড রোদে বেড়েছে গরম, তার ওপর শুরু হয়েছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়ার পরেই শুরু হয় লোডশেডিং। গরম বাড়ার সাথে সাথে লোডশেডিং এর মাত্রাও বাড়ে। দুপুরে এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। আর রাতে ঘুমানোর সময়েও লোডশেডিং থেকে রেহাই পাচ্ছেন না লোকজন। এতে করে বেড়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি। আজ রবিবার সিলেট মহানগরের বন্দর-জিন্দাবাজারের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। এতে করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখার চেষ্টা চলছে। রাতে অনেক স্থানে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। অপরদিকে বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং এর কবলে পড়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতেও লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
অসুস্থ বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে বিপাকে ভুক্তভোগীরা। এদিকে গত সপ্তাহের মধ্যে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় হিটস্ট্রোকে মারা যায় ০৩ জন। সিলেটে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাথে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। গ্রাহকরা এ বিষয়ে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন। তবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে- চাহিদার তুলনায় কম তাই ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর বিক্রয় ও বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির বলেন, চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে বলে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার  সিলেট বিভাগে পিডিপি বিদ্যুৎতের চাহিদা ছিলো ১৮৪ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৬৫ মেগাওয়াট, ঘাটতি আছে ১৯ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগে ১০% লোডশেডিং হচ্ছে।এই সময়ে সিলেট জেলায় ১২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ১০৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। ফলে জেলায় ১৩% লোডশেডিং হচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন- সমস্যা দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে গরমে ও বিদ্যুৎ সংকটে ধ্বংসের মুখে মুরগী খামারিরা। কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর এলাকার নিহা পোলট্রি খামারের কর্তাধারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জানান, তাঁর মুরগির শেডে ঈদের পূর্বদিন থেকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে প্রায় ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি ও ২ হাজারের বেশি লেয়ার মুরগি মারা গেছে। মৃত মুরগিগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে এমনিতেই বাজার মন্দা, তার ওপর লোডশেডিং ও তাপদাহের কারণে আমাদের ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে পরবর্তী তিন-চার দিন বিদ্যুৎ প্রায় ছিল না। গত সপ্তাহে কিছুটা লোডশেডিং কমলেও শুক্রবার থেকে তা আবারও বেড়ে গেছে। সকাল ৭টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়, দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে এলেও দ্রুত আবার চলে যায়। বিকেলেও বিদ্যুৎ থাকে না। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান মেলেনি। গত এক সপ্তাহে তাঁর খামারে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এদিকে সরকারী তথ্য মতে, গ্রামে গঞ্জে প্রতিটি ঘরে ফ্রিজ এবং এসির চাহিদা বেড়েই চলছে। এতে করে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বিদুৎ সরবরাহ হচ্ছে। নগরের নান্দনিকতার এলিট শ্রেনির বিলাসবহুল জীবন ও গ্রামে গঞ্জে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, এসি,সহ আধিকায়নের প্রভাব মজুদের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরনের ব্যর্থ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে।