• ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

পানি প্রত্যাহারের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় জনসমক্ষে আনুন

দৈনিক সোনালী সিলেট
প্রকাশিত জুন ২৮, ২০২৫
পানি প্রত্যাহারের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় জনসমক্ষে আনুন

সোনালী ডেস্ক:

শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৫৪টি যৌথ নদীর উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিপর্যয় নির্ণয় ও তা জনসমক্ষে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন পানি বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা।

সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুপ্রতিবেশী সূলভ সম্পর্কের খাতিরে বহুদিনের নীরবতা পরিহার করে আওয়াজ তুলতে হবে, কারণ এই মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের জন্যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিলীন হয়ে অর্থনীতি, কৃষি, মতস সম্পদ, নৌপরিবহন, শিল্প, বন, বন্যপ্রানী, জীববৈচিত্র্য ধংস হাওয়ায় মানুষ পেশা ত্যাগ করে দেশান্তরী হচ্ছে।

পানি নিয়ে সংঘাতঃ বাংলাদেশের পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রতিকার বিষয়ে টাসিং সোলস ইউএস-এর অর্থায়নে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, নিউইয়র্ক আয়োজিত উক্ত সম্মেলনের উদ্ভোদনী প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আইএফসি নিউইয়র্ক চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান। পরিচালনা করেন আইএফসি বাংলাদেশ সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদার।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের পানি বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা।

বক্তারা বলেন উজানে অসহনশীল পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা অববাহিকা সহ বাংলাদেশের কিছু এলাকায় প্রতি বছর কয়েক দফা মারাত্মক বন্যা হয়, মেঘনা ও গংগা অববাহিকায় ঘুরে ফিরে প্লাবন বিপর্যয় আসে, আর অন্যত্র প্লাবনভূমি গুলো হয় শুকনা থেকে যায় নাহয় স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্লাবিত হয়। গত আগষ্টে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থিত ডম্বুর জলাধারের পানি বিনা নোটিশে হঠাৎ ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে এক প্রলয়ঙ্কারী বন্যা আঘাত হানে যা বিগত ৪০ বছরেও দেখা যায়নি।

অন্যদিকে শুকনো মওসুমে বাংলাদেশের প্রায় সকল নদী প্রায় শুকিয়ে যায়। কারণ উজানে এদেশের জনগনের কোন মতামত নানিয়ে নির্মিত বাধ থেকে পানি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়, ভাটি অঞ্চলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কোন তোয়াক্কা না করে।

উক্ত সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা যৌথ নদীর ব্যবস্থাপনার জন্য বহুপাক্ষিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেন যেন প্রাকৃতিক নদী গুলোকে রাজনৈতিক সীমারেখায় ভাগ করে ফেলা না হয়, ভাটি অঞ্চলের মানুষের উপর এমনকি নদীগুলোর উপর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া কথা না ভেবেই।

উক্ত সম্মেলনে পাচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, কানাডায় বসবাসরত যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডঃ মনিরুল কাদের মির্জা, নেপাল জলস্রোত বিকাশ সংস্থার সহসভাপতি রামজি ভান্ডারি, অনলাইনে ভারতের অরুনাচল থেকে আইনজীবি এবো মিলি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইয়াদুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ডঃ মোহাম্মদ ইমরান আনসারী ও মেহরাজ আক্তার মোমেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিপিকেএস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার দুলাল, বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও সমন্বয়ক নাজমুন নাহার।

সম্মেলনের বিষয় ভিত্তিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশীপের সাবেক সভাপতি শহিদুল হাসান। সমাপ্তি অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক জসীম উদ্দিন আহমাদ।

কয়েকটি প্রস্তাবনা গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে দিনব্যাপি সম্মেরন শেষ হয়। প্রস্তাবনায় সরকারকে আহ্বান জানানো হয় যে, ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি কমিশন গঠন করে যৌথ নদীগুলোর স্বচ্ছ ও ন্যায্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়া, বর্তমান গঙ্গা চুক্তি ২০২৬ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় একটি নতুন ও ন্যায্য গঙ্গা চুক্তি করারও আহ্বান জানানো হয়, যাতে সারা বছর ধরে গ্যারান্টিযুক্ত পানিপ্রবাহ নিশ্চিত হয়।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, ভারত যেন তার একতরফা নদী সংযোগ প্রকল্পগুলো স্থগিত করে, যতক্ষণ না নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর পানিবণ্টন অধিকার সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা হয়। এতে সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠন এবং বাস্তব সময়ে পানির তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধের সুপারিশ করা হয়। গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং যথাযথ খনন ও জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে দেশের পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সম্মেলন থেকে সরকারকে এসব দুর্যোগ মূল্যায়ন করে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে আহ্বান জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ হয়ে প্রবাহিত যৌথ নদীগুলোর পানির পরিমাণ এতটাই অপ্রতুল যে, তা নিজস্ব পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতেই যথেষ্ট নয়, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পানির চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা।

সবশেষে, হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়, যাতে অববাহিকার সকল দেশ ন্যায্যভাবে উপকৃত হতে পারে এবং নদীগুলো নিজে নিজেই বাঁচার মতো যথেষ্ট পানি পায়।