সোনালী ডেস্ক:
ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর থেকে গত ১৯ দিন ধরে আটকে আছে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান 'এফ-৩৫বি'। গত ১৯ দিনেও যুদ্ধবিমানটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখন বিমানটিকে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার কার্গো বিমানে করে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে যুক্তরাজ্য, যা এ ধরনের যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৫ জুন সকালে খারাপ আবহাওয়ার কারণে যুদ্ধবিমানটি নিজ জাহাজে ফিরতে পারেনি। তাই পাইলট নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিমানটি তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে অবতরণ করান। তবে অবতরণের পর যুদ্ধবিমানটিতে 'কারিগরি ত্রুটি' দেখা দেওয়ায় বিমানটি আর উড়তে পারছে না।
এতে বলা হয়, একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান খারাপ আবহাওয়ার কারণে এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলসে ফিরতে পারেনি। নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিমানটি ভারতের তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। পরে বিমানটিতে কারিগরি ত্রুটিতে পড়ে, যার কারণে এটি ক্যারিয়ারে ফিরতে পারেনি।
ভারতীয় বার্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরালা উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ রণতরী থেকে ওড়ে 'এফ-৩৫বি'। কিন্তু জ্বালানি কম থাকায় তিরুবনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সেটি।
অন্য একটি সংবাদমাধ্যম আবার দাবি করেছে, শুধুমাত্র জ্বালানি কম থাকার কারণেই যে যুদ্ধবিমানটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে, এমন নয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে সাহায্য চান ওই যুদ্ধবিমানের পাইলট। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির 'এফ-৩৫বি' একটি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। এই ধরনের মহড়ার সময় সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই কারণে আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুরুতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হলেও তা সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এরপর ব্রিটেন থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের একটি দল অত্যাধুনিক সরঞ্জাম নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। জানা গেছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) সহযোগিতায় বিমানটিকে বিমানবন্দরের মধ্যে থাকা একটি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল (এমআরও) হ্যাঙ্গারে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
হাইকমিশন জানিয়েছে, বিমানটি কখন মেরামত হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে যেন কম ব্যাঘাত ঘটে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি এই 'এফ-৩৫বি' প্রকৃতপক্ষে একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ, লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলা চালানোর পাশাপাশি নজরদারি বা গুপ্তচরবৃত্তির কাজেও একে ব্যবহার করা যেতে পারে। যুদ্ধবিমানটি 'স্টেল্থ' শ্রেণির হওয়ায় সহজে একে চিহ্নিত করতে পারে না কোনো রাডার।
'এফ-৩৫বি'-এর আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট রয়েছে। অত্যন্ত ছোট রানওয়েতে একে ওড়ানো সম্ভব। আবার উল্লম্ব ভাবেও অবতরণ করতে পারে। যুদ্ধবিমানটির মূল ভার্সানটির নাম 'এফ-৩৫ লাইটনিং টু'। এর মোট তিন ধরনের মডেল রয়েছে। 'এফ-৩৫বি' মূলত বিমানবাহী রণতরীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের আনুমানিক দাম ১১ কোটি ডলার।
সদ্যসমাপ্ত ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে 'এফ-৩৫ লাইটনিং টু'- এর বহুল ব্যবহার করেছে ইহুদি বিমান বাহিনী। এছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটো- দেশগুলোকে এটি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। যুক্তরাজ্য ছাড়াও নেদারল্যান্ডস এবং ইতালির কাছে রয়েছে এই মার্কিন যুদ্ধবিমান।