সোনালী ডেস্ক:
বাংলাদেশের যে ক’টি স্থান পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তার মধ্যে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় হলো কক্সবাজার। এটা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত তো বটেই-এখানে আছে সাগর-পাহাড়ের অপূর্ব সমন্বয়। কক্সবাজারে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতকালে একটু বেশী সমাগম ঘটে। সৌন্দর্য্য আর সাগরের ঢেউ এর টানে দেশী বিদেশীসহ পর্যটকরা ভীড় জমান
কক্সবাজারে। কক্সবাজারে পর্যটকরা কেন আসেন? কী আছে এখানে? এমন প্রশ্ন বা কৌতুহল অনেকেরই থাকে। অরণ্য পাহাড়, ঝরণা, সাগর, নদী, দ্বীপ থেকে দ্বীপের সান্নিধ্য লাভ করার ইচ্ছা নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ ভান্ডার সুন্দরী পর্যটন নগরী কক্সবাজারে তাই তো বনভোজন থেকে শুরু করে শিক্ষা সফরে এসে ভ্রমণ বিলাসীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন। খুঁজে নিতে চান পছন্দের জায়গাটি। কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা ৯৯ শতাংশ পর্যটকের পছন্দ সুদীর্ঘ সৈকত। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে উঁচু নিচু সুশীতল পাহাড়, সমুদ্র তটে ছায়াঘেরা সারি সারি ঝাউগাছ, পাহাড়ের চূড়ায় নয়নাভিরাম বৌদ্ধ প্যাগোডা হিমছড়ির ঝরনা-পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান। সকালে ও বিকালে সমুদ্রের উত্তাল নীল পানিরাশিতে গোসল, বিকেলে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখা, উপকূলের নরম চিকচিক বালুচরে হাঁটাচলা, রাজকাঁকড়ার দৌড়ঝাপ, গভীর রাতে সমুদ্র গর্জন-পর্যটকদের জন্য অবশ্যই বাড়তি আকর্ষণ। কক্সবাজার নামটি ইতিহাসের বিবেচনায় খুব প্রাচীন নয়। ২০০ বছরের পুরনো। নামকরণের পেছনে রয়েছে একজন ইংরেজ সৈনিক ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্সের নাম। ১৩৩৮ সালে পর্তুগীজ ঐতিহাসিক জোঁ আ্যা দ্য বোরোস তার মানচিত্রে এবং ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের নাবিক ছিদি আলি ছিদিবি তার বর্ণনায় এই এলাকার নাম বাকোলিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাস গবেষকদের মতে, কক্সবাজারের প্রাচীন নাম ‘পেংওয়া’। রাখাইন শব্দ পেংওয়ার অর্থ হলো হলদে ফুল। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্তকক্সবাজারসহ রামু এলাকা পেংওয়া নামে বহুল পরিচিত ছিল। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তৎকালীন বার্মার সা¤্রাজ্যবাদী রাজা ‘মওয়াইং’ স্বাধীন আরাকান আক্রমণ করে আরাকানের নির্বাচিত রাজা থামাদাকে হত্যা করে আরাকান রাজ্য দখল করে নেন। শুরু হয় রাখাইনদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন। এর ফলে অধিকাংশ অধিবাসী পিতৃভূমি আরাকান ত্যাগ করে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীতে আশ্রয় নেন। এসব শরণার্থীকে পুনর্বাসনেরজন্য ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্সকেসুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে এখানে পাঠান। ক্যাপ্টেন কক্স তখন এখানে একটি বাজার স্থাপন করেন। যার নাম ‘কক্স সাহেবের বাজার’। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা গেলে তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি ‘কক্সবাজার’ নামে পরিচিতি লাভ করে। কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে পার্বত্য বান্দরবান জেলা ও মায়ানমার, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে নাফ নদী। জেলার আয়তন ২ হাজার ২৬০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এই জেলার সাতটি থানা হচ্ছে টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া,
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। এখানে দেখতে পারেন বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, নীল পানির গর্জন, অরণ্যভরা পাহাড়, সৈকতের নরম চিকচিক বালু, কাঁকড়া, নানা রকমের শামুক ও ঝিনুক। আরো দেখতে পাবেন মন্দির, খিয়াং, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, পর্যটন এলাকা, সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। শুটিংয়ের জন্য অনন্য স্থান কক্সবাজার। রামুতে দেখতে পারেন বৌদ্ধদের খিয়াং, মন্দির, রামকোট বানশ্রম, তীর্থধাম, রাবার বাগান, জগৎজ্যোতি, শিশু সদন, বন, লামার পাড়া, বৌদ্ধ পাড়া, সাদা চিংক্যাং, লাল চিংক্যাং ও ঝড়ক্যাং অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির, নারকেল বাগান, জাদ, আঁধার মানিক ও স¤্রাট শাহ সুজা সড়ক। মহেশখালীতে দেখতে পাবেন বিশাল পাহাড়, অরণ্য-সমুদ্র। প্রায় দেড়’শত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক আদিনাথ মন্দির, জেলেপাড়া, রাখাইন পাড়াতে ঘুরতে পারেন অনায়াসে। বৌদ্ধমূর্তি, খিয়াং ও মন্দির রয়েছে প্রচুর। সমহেশখালীর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। মৎস্যভান্ডার হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে। সমুদ্রপথে যেতে হয়। বিশাল মাছ, মাছ ধরার দৃশ্য, শুটকি
কারখানা ও মুক্তা উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়। এটি কাকড়ার স্বর্গরাজ্য। ইনানীতে দেখতে পারেন সারি সারি ঝাউ বাগান, নারকেল বাগান, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এবং শেষ বিকেলে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। কুতুবদিয়াতে রয়েছে বিখ্যাত বাতিঘর, সমুদ্র, বিসিক লবণ প্রকল্প, কুতুব আশুলিয়া দরবার শরিফ, শাহী দরবার শরিফ, কালারসা মসজিদ, শিলা পাথর, ঝাউবন, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। উপকূলে মাছ ধরার অপূর্ব দৃশ্য। হিমছড়িতে দেখবেন পাহাড়, ঝরনা, রাজকাঁকড়া, বিশাল সমুদ্র। সারা দিন হাতির পিঠে চড়ে
ঘুরতে পারবেন এখানে-সেখানে। টেকনাফে গহিন অরণ্যঘেরা পাহাড়, উঁচু নিচু টিলা, অপরূপ নাফ নদী, জালিয়ার দ্বীপ, শাহ পরীর দ্বীপ বাহারছড়া, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ, এলিফ্যান্ট পয়েন্ট, মায়ানমার সীমান্ত, বৌদ্ধ, খিয়াং বাদী, সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ও সারি সারি নারকেল ও সুপারি বাগান, বার্মিজ মার্কেট-শুটকির জন্য প্রসিদ্ধ স্থান। সেন্টমার্টিন দ্বীপে রয়েছে উত্তাল সমুদ্র সৈকত, প্রবাল পাথর, সারি সারি নারকেল বাগান, কেয়া গাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, শামুক-ঝিনুক, চুনাপাথর, মুক্তাসহ সমুদ্রের
১০৩ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী দেখতে পাবেন এখানে। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের “সমুদ্র বিলাস” বাংলো রয়েছে এখানে। কক্সবাজারে যোগাযোগের মূল মাধ্যম হচ্ছে সড়কপথ। রেলপথ চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দেশের যেকোনো স্থান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার আসা যায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দূরত্ব ১৫১ কিলোমিটার। সময় লাগে ৪ ঘন্টার মতো। এস আলম, সৌদিয়া, বোরাক ছাড়াও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ সার্ভিস গ্রীন লাইন সোহাগসহ নানা নামে লাইন সার্ভিস রয়েছে। ঢাকার ফকিরাপুল, আরামবাগ থেকে সরাসরি কক্সবাজারে সাধারণ ও শীততপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু রয়েছে। আকাশপথে সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশ বিমান ও অনিয়মিতভাবে বেসরকারি বিমান সার্ভিস চালু রয়েছে। নৌপথেও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে রামুতে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগে আধ ঘন্টা। বাস, মাইক্রো, ট্যাক্সি, টেম্পো ভাড়া নেবে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা। রাত ১২টা পর্যন্ত এই সড়কে যান চলাচল করে। কক্সবাজার শহর থেকে রামুর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে সি ট্রাক, স্পিডবোট বা ট্রলারে করে যেতে হয় মহেশখালীতে। ভাড়া নেবে ট্রলারে ৫০ টাকা আর স্পিডবোটে ১০০ টাকা।
সময় লাগে স্পিডবোটে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আর ট্রলারে ১ থেকে দেড় ঘন্টা। সমুদ্রপথে ট্রলার নিয়ে যেতে হয় দ্বীপ থানা কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে স্টিমার ও ট্রলারে যাওয়া যায়। ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সময় লাগবে ৮ ঘন্টা। কক্সবাজার থেকে স্পিডবোটে যাওয়া যায়। ভাড়া প্রতিজন ২৫০ টাকা। সময় লাগে ১ ঘন্টা। এখান থেকে লঞ্চে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ভাড়া ১৫০ টাকা। কক্সবাজার থেকে ইনানী যেতে হয় বাস কিংবা ট্যাক্সি মাইক্রোবাস নিয়ে। ভাড়া নেবে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সময় লাগে সর্বেচ্চ ১ ঘন্টা। ভাড়া নেবে রিজার্ভ সর্বেচ্চ ১০০০ টাকা। কক্সবাজার সমুদ্রপথ ধরে ৮ কি.মি দূরে অপরুপ হিমছড়ি। জিপ গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। ভাড়া নেবে প্রতিজন ১০০ টাকা আর রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। শহরের ঝাউতলা থেকে জিপ ভাড়া পাওয়া যায়। সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। কক্সবাজার থেকে সড়কপথে টেকনাফ যেতে হয়। বিভিন্ন নামের সাধারণ ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। ভাড়া নেবে যথাক্রমে প্রতিজন ১০০ টাকার মত। সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩ ঘন্টা। টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে নাফ নদী, অতঃপর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ইঞ্চিনচালিত ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যেতে হয়। ভাড়া নেবে প্রতিজন ১০০ টাকা রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৩-৪ হাজার টাকা। সময় লাগে ৩ ঘন্টা। কক্সবাজারে থাকার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের শৈবাল, প্রবাল, উপল, লাবণীসহ কয়েকটি কটেজ রয়েছে। প্রাইভেট হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল সায়মন, দি গ্র্যান্ড হোটেল, হোটেল পালংকি, হোটেল সি-কুইন, হোটেল প্যানোয়া, হোটেল নিরিবিলি, হোটেল আল-হেরা, হোটেল হলিডে, হোটেল সি-ভিউ, হোটেল এসকে, হোটেল সানমুন, ডায়মন্ড প্যালেস, জিয়া গেস্ট ইনসহ শতশত হোটেল। সর্বনিন্ম ২০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেবে। উন্নতমানের হোটেলগুলোতে এসি ও গাড়ি পার্কিং এবং রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। শহরের উপকণ্ঠে এসব হোটেলের অবস্থান। রুচিসম্মত খাবারের জন্য শহরে উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে-ঝাউবন রেস্তোরা, বাকোলী ডায়মন্ড রেস্তোরা, নিরিবিলি, রজনী, সজনী, সি-ভিউ, নিউ ডায়মন্ড
রেস্তোরা, সাগরিকা, হোটেল নাহার ও অভিরাম। সর্বনিন্ম প্রতিজন ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে ভালো খাবার খাওয়া যাবে।
রামুতে থাকার হোটেল রয়েছে বেশক‘টি। ভাড়া নেবে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। বন বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগের মনোরম দু’টি বাংলোও রয়েছে। থাকতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। মহেশখালি ও কুতুবদিয়াতে থাকার জন্য হোটেল রয়েছে বেশক’টি। ভাড়া আলোচনা করে নির্ধারিত হয়। জেলা পরিষদের বাংলো রয়েছে একটি। কুতুবদিয়াতেও হোটেল রয়েছে। ভাড়া আলোচনা করে নির্ধারণ করা হয়। কয়েকটি বাংলোও আছে এখানে। ইনানী, সোনাদিয়াতে থাকা খাওয়ার হোটেল রয়েছে। ইনানীতে ক‘টি
সরকারী বাংলোতে থাকতে গেলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। কক্সবাজার শহর থেকে সকালে এসে ভ্রমণ শেষে বিকেলে ফিরে আসা যায়। টেকনাফে থাকার জন্য নাফ ইন্টারন্যাশনাল, নাফফুইন, নিরিবিলি, নাফ সীমান্ত, হোটেল
স¤্রাটসহ বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। বনবিভাগ, জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আধুনিক বাংলোও রয়েছে। এখানে থাকতে হলে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি লাগে। খাবারের জন্য বেশ ক’টি উন্নতমানের রেস্টুরেন্টও রয়েছে এ শহরে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার জন্য বেসরকারি পর্যটন সংস্থার আবাসিক হেটেল ‘অবকাশ’ ও খাবার হোটেল রয়েছে। জেলা পরিষদ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের দু’টি বাংলো রয়েছে। যাওয়ার আগেই জেলা সদর থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। কেউ কেউ আবার ওখানে যাওয়ার সময় খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যান। সকালে টেকনাফ গিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে দ্বীপ ভ্রমণ শেষ করে বিকেলে ফিরে আসা যায়।
সাংবাদিক-কলামিস্ট