• ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আবস্কিাররে বচিত্রি কাহনিী: আফতাব চৌধুরী

দৈনিক সোনালী সিলেট
প্রকাশিত জুলাই ২, ২০২৫
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আবস্কিাররে বচিত্রি  কাহনিী: আফতাব চৌধুরী

সোনালী ডেস্ক:

রক্তচাপ মাপার যে যন্ত্রটি ডাক্তাররা ব্যবহার করেন তার সঙ্গে আমাদের সবারই অল্পবিস্তার পরিচয় আছে। কিন্তু অনেকেই হয়ত যন্ত্রটির নাম জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেন না। রক্তচাপ অর্থাৎ ব-াডপ্রেসার মাপার যন্ত্রেও নাম হল ফিগমোম্যানোমিটার। গ্রীক শব্দ জ্ঞফিগমোস- এর অর্থ হল নাড়ি বা পালস। ধমনীর ভেতর দিয়ে চলতে থাকা রক্ত ধমনীর দেওয়ালে যতটা চাপ দেয় সেটাই হল রক্তচাপ। ১৭০৮ সালে জীবদেহে রক্তচাপের প্রথম উপস্থিতি আবিস্কার করেছিলেন স্টিফেন হেলস নামে একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক। ধর্ম চর্চার পাশাপাশি মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের রহস্য নিয়ে তীব্র অনুসন্ধিৎসা ছিল স্টিফেনের। ১৭৩৩ সালে রক্তচাপ মাপার জন্য অদ্ভুত একটা পরীক্ষা করেন স্টিফেন হেলস। একদিক ছোট অন্যদিক প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা ইউ আকারের ফাঁপা কাচের নলের ছোট দিকটাকে ছুঁচালো করে ছটফটে এক ঘোড়ার গলার ধমনীতে প্রবেশ করিয়ে দেন তিনি। এতে তিনি দেখলেন এ নলের বিপরীত স্তম্ভ বেয়ে রক্ত উঠে যাচ্ছে নফুট উঁচুতে। তার পর কেটে গেল প্রায় দেড়শ বছর। ১৮৫৩ সালে জার্মান চিকিৎসক কার্ল ভল ভিরোট আবিস্কার করলেন নাড়ির গতি, চাপ আর গোলমাল লিপিবদ্ধ করাবার যন্ত্র ফিগমোগ্রাম। পরের বছরই তিনি রক্তচাপ মাপার একটি যন্ত্রও তৈরী করেন। এ যন্ত্র ব্যবহারে অনেক জটিলতা থাকলেও এটাই পৃথিবীর প্রথম রক্তচাপ মাপার যন্ত্র। প্রথম সফল ভাবে কার্যকর ফিগমোম্যানোমিটারের আবিস্কার জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল ভন বাচের জন্ম হয় প্রাগ শহরে ১৮৩৭ সালে। জার্মানির প্রাগ ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে পড়াশোনা করে ১৮৬২-তে স্যামুয়েল ডাক্তার হন। ভিয়েনার শরীরবিদ্যার এক গবেষণাগারে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করার পর তিনি চলে যান মেক্সিকো। মেক্সিকোর সম্রাটের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করার পর তাঁর মৃত্যু হলে ডাঃ বাচ জার্মানিতে ফিরে আসেন। তারপর ১৮৭০ সালে তিনি মেডিক্যাল স্কুলের শরীরতত্ত্ব বিভাগে যোগ দিয়ে  ১৮৭৭ সালে ওই বিভাগের অধ্যাপক হন। ইতিমধ্যে মানবদেহ নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করে ডাক্তার স্যামুয়েল বাচ সুপরিচিত হয়ে উঠেন। তারপর ১৮৮০ সালে প্রথম সফল ও নির্ভুল ফিগমোম্যানোমিটার তৈরি করে স্যামুয়েল ভন বাচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক উজ্জ¦ল আলোক স্তম্ভ হয়ে উঠলেন। ডাঃ বাচের তৈরি যন্ত্রে পাতলা রবারের তৈরি একটা পানি ভরা পানির সঙ্গে জোড়া থাকত কাচের পারদ ভর্তি সরু লম্বা নল বা মার্কারি ম্যানোমিটার। পাতলা বলটাকে কনুইয়ে রোগীর পালসের উপর রেখে চাপ দিতেন ডাঃ বাচ। অন্য হাত থাকত রোগীর কব্জির রেডিয়াল পালসে। নাড়ির পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুহ–র্তে ম্যানোমিটারের পারদের উচ্চতা দেখে বাচ রক্তচাপ মাপতেন। হƒদপিন্ডের সঙ্কোচনের সময় ধমনীতে রক্তের চাপ মোটামুটি নির্ভুল ভাবে মাপা যেত এ যন্ত্র দিয়ে। বর্তমানে যে গোলাকার ঘড়ির মতো দেখতে এক কাঁটাওয়ালা যন্ত্র দিয়ে চিকিৎসকরা রক্তচাপ মাপেন সেটার নাম অ্যানিরয়েড ফিগমোম্যানোমিটার। এর আবিস্কারক হলেন ফরাসি চিকিৎসক প্যিয়ের কার্ল পোঁটে। ১৮২৫ সালে পোঁটের জন্ম হয়েছিল প্যারিস শহরে। চিকিৎসক হিসাবে প্যিায়ের কার্ল পোঁটে অসাধারণ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। প্রতিভাবান এ চিকিৎসক ছাত্রদের জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রের দুটি বইও লিখেছিলেন। জ্বর, অ্যানিমিয়া, রক্তচাপে আক্রান্তÍ রোগীদের হƒদপিন্ডের লাবডুব শব্দে অস্বাভাবিক আওয়াজ, চিকিৎসকের পরিভাষা মারমার প্রথম চিনতে পেরেছিলেন ডাঃ পোঁটে। ডাঃ পোঁটের আবিস্কৃত দুঞ্চটি কাজের যন্ত্রের মধ্যে একটি হল অ্যানিরয়েড ফিগমোম্যানোমিটার। তাঁর এ যন্ত্রে বাতাসের চাপে কাঁটা ঘোরে এমন অ্যানিরয়েড ম্যানোমিটার হাওয়া ভরা পাতলা রবারের একটা বালেŸর সঙ্গে জোড়া থাকত সরু নল দিয়ে। ডাঃ স্যামুয়েল বাচের মতো একই পদ্ধতিতে কনুইয়ের পালসের উপর বালŸটাকে রেখে রক্তচাপ মাপতেন এ ফরাসী চিকিৎসক পোঁটে। ম্যানোমিটারের ঘুরতে থাকা কাাঁটা দেখেই তাঁর যন্ত্রে রক্তচাপ বোঝা যেত। ডাঃ স্যামুয়েল বাচের যন্ত্র ডাক্তাররা ব্যবহার করেন। কিন্তু ডাঃ পোঁটের যন্ত্র ফরাসী চিকিৎসকরা তাঁদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করেন। তারপর ১৮৯৬ সালে আরও উন্নত ফিগমোম্যানোমিটার তৈরি করলেন জার্মান চিকিৎসক সিপিয়ন রিভারোক্কি। এতে থাকত কাপড়ের প্রায় চার ইঞ্চি চওড়া ও আড়াই ফুট লম্বা একটা ফিতে। ফিতের দুঞ্চভাজ কাপড়ের মধ্যে থাকত হাওয়া ভরা একটা আয়তাকার ব্যাগ। এ ফিতে বা প্রেসার কাফ জড়ানো হত রোগীর হাতে। সহজে ব্যবহার যোগ্য হওয়ায় ডাঃ রিভারোক্কির তৈরি যন্ত্রটি বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছে যায়। তবে বাচ ও পোঁটের যন্ত্রের মতো তাঁর যন্ত্রটিও শুধু হƒদপিন্ডের সঙ্কোচনের সময়ের সিস্টোলিক রক্তচাপ মেপে দিত। সিস্টোলিক এর সঙ্গে সঙ্গে ধমনীর ডায়স্টোলিক রক্তচাপ মাপার প্রথম যন্ত্র তৈরি করেছেন রাশিয়ার চিকিৎসক নিকলাই কোরোটকফ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমেই ডাঃ কোরোটকফ এ যন্ত্রটি চিকিৎসকদের হাতে তুলে দেন। ডাঃ লিওনার্দ স্টিনফেল্ড বিংশ শতাব্দীতে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে বাচ্চাদের রক্তচাপ মাপার একটি বিশেষ যন্ত্র আবিস্কার করেন। প্রায় দুশ বছর আগে ধর্মযাজক স্টিফেন হেলস রক্তচাপ আবিস্কার করে তা মাপতে চেয়েছিলেন বলেই আজ বিবর্তনের মাধ্যমে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ফিগমোম্যানোমিটার রোগীদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে। সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।