• ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বিএনপির কারণে সংস্কার এগোচ্ছে না, এমন দাবি বিভ্রান্তিকর: তারেক রহমান

দৈনিক সোনালী সিলেট
প্রকাশিত জুলাই ২, ২০২৫
বিএনপির কারণে সংস্কার এগোচ্ছে না, এমন দাবি বিভ্রান্তিকর: তারেক রহমান

সোনালী ডেস্ক:

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ছাড় দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনায় রাষ্ট্র সংস্কারে ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। তবে এর মানে এই নয় যে সব কিছুতে ছাড় দেওয়া হবে। বিএনপির কারণে সংস্কার এগুচ্ছে না এমন দাবি বিভ্রান্তিকর। মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে বিএনপি হচ্ছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতক দল। বড় হওয়ার কিছু সমস্যাও রয়েছে। বড়দের অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। স্যাকরিফাইস করতে হয়। দেশের মানুষ যেনো গণতন্ত্রের চর্চা করতে পারে তার জন্য আমরা ছাড় দিয়েছি। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং একটি কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি কাজ করছে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ এখন জানতে চায় দেশের জন্য আমরা কি ভাবছি। কৃষকের জন্য কি পরিকল্পনা রয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কোথায় যাচ্ছে, নারীরা কতটা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন পাচ্ছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কি হবে, বেকারদের জন্য কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রশ্নগুলোর জবাব রাজনৈতিক দলগুলোকেই দিতে হবে। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ২১ দফা কর্মসূচি আমাদের সেই পথেই পরিচালিত করে।

তিনি আরও বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয় তখন বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। মাত্র চারটা পত্রিকা প্রকাশ হতো। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। গণতন্ত্রের শর্ত হলো সহনশীলতা। অপরের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আজকে থেকে আড়াই বছর আগে বিএনপি বিফর্ম প্রস্তাব দিয়েছিল। আমাদের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলের আদর্শগত মিল নাই থাকতে পারে তারপরও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে যখন তিন দিন কোনো সরকার ছিল না আপনারা বিএনপির নেতাকর্মীরা দায়িত্ব নিয়ে দেশের আইন শৃংখলা পরিচালনা করেছেন।

নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে মানুষ আমাদের অপছন্দ করে। গণতন্ত্রের ভীত যাতে শক্ত হয় সে লক্ষে কাজ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে সহয়তা করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই সম্মেলনে ১ হাজার ৫১১ জন কাউন্সিলরের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো কতটা শক্তিশালী। তবে এই কাউন্সিলরদের বাইরেও সারাদেশে বড় পরিসরে বিএনপির প্রকৃত কাউন্সিলর রয়েছে। তারা হলো দেশের ১২ কোটি ৫০ লাখ ভোটার। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বিএনপিকে সামনের পথ রচনা করতে হবে।

জাতীয় ঐক্য এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে সংগ্রাম করেছেন। গুম, হত্যা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে তারা পিছু হটেননি। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যার বিরুদ্ধে কমপক্ষে একটি হলেও মামলা নেই। এই ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং লড়াইয়ের ফলে আজ বিএনপির কাঁধে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

ভবিষ্যতের রূপরেখা সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে। এখন সময় এসেছে দেশের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনগণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার। শুধুমাত্র সম্মেলন বা কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনই নয়, বরং জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও প্রত্যাশাকে ধারণ করে বিএনপিকে আগামীর দায়িত্ব নিতে হবে। ফ্যাসিস্টরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল বলে মানুষ তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশের মানুষের সঙ্গে দেখা হবে।

এর আগে সকাল থেকেই খণ্ড, খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থল ব্যায়ামাগার এলাকায় ভীড় করতে থাকেন দলের নেতাকর্মীরা। সকাল দশটায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড্ডয়নের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। উদ্বোধন শেষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টির সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও বিভিন্ন ইউনিট নেতারা।