
সোনালী ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা আমরা জানতে পেরেছি। যে জনগণ এত মূল্য দিয়ে পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ এ দেশে আরেকটা ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে দিবে না।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগরী ও জেলা জামায়াত এ জনসভার আয়োজন করে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাটগ্রাম কী হয়েছে তারা আপনারা দেখছেন, সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে এক দল। এই অবস্থায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন।
জামায়াত আমির বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর ধরে জামায়াত তার সাধ্যমতো জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঘরে-বাইরে লড়াই করছে। স্বৈরাচার সরকার আমাদের সংগঠনের মাথা থেকে শুরু করে ১১ জন নেতাকে আমাদের মাঝে থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাদের ওই সমস্ত নেতারা বেঁচে থাকলে বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে আশা হারানো জাতিকে আশা দেখাতেন।
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা আমাদের পাকিস্তানি বলে গালি দিয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। আমাদের কোনো নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। আমাদের নেতারা দুনিয়ার কোনো অপশক্তিকে পরোয়া করেনি। হুমকি-ধামকিকে পাত্তা দেইনি। তারা হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছিল।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, যে সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু মানি না। এটা বলেই তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা মনে করি সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক। সকলেই সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। ওরা মালিক হয়েছিল রাষ্ট্রের। আমরা সেবক হব জনগণের।
জনসভার প্রধান বক্তা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ফাঁসির মঞ্চ থেকে লক্ষ জনতার মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। মিথ্যা স্বাক্ষীর মাধ্যমে আমাকে ফাঁসি দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিলো। যে গলায় ফাঁসির দড়ি পড়ার কথা ছিল সেখানে ফুলের মালা পড়ানো হচ্ছে। আমার কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদ, রংপুরের সন্তান আবু সাঈদকে স্মরণ করে তিনি বলেন, আবু সাঈদের বুকের তাজা রক্তের মাধ্যমেই আন্দোলনে দেশ উত্তাল হয়ে উঠিছিল। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের কারণেই আমি মুক্ত হয়েছি। আমি চাই আবু সাঈদের হত্যার বিচার দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
রংপুর মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে ২০২৪ সালের ছাত্র গণ-আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের খুনিসহ ফ্যাসিস্টদের বিচারের দাবি, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ ও রাজনৈতিক সংস্কার, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকারসহ চার দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে এ সময় বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন জনসভায়। একইসঙ্গে বক্তব্য দেন এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা।