
সোনালী ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার ফলাফলে প্রকাশ-গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর তাপমাত্রা ইদানিং যে হারে বেড়ে চলেছে তা যদি অব্যাহত
থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ গাছ এবং প্রাণীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যতখানি ধারণা করা হত তার চেয়ে বেশি হারে বিলুপ্তির হার দাঁড়াবে। এ হার ৪৭ শতাংশ হতে পারে। এর আগে অন্য এক গবেষণায় বিলুপ্তির হারকে ১৩ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেবারের গবেষণায় অবশ্য তারা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার মত উষ্ণমন্ডলীর অঞ্চলের উদ্ভিদগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেননি। সাম্প্রতিক পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রকাশিত ফলাফলে বিজ্ঞানীরা আগের পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, বিলুপ্তির এ হার ৪৭ শতাংশ। মিসৌরী বোটানিক্যাল গার্ডেনের গবেষক পিটার জর্জেনসেন বলেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বসবাসের জন্য গাছপালা কেটে ফেলার মত নানা কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে গাছপালা। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় ১৯৭০ সালে দক্ষিণ ইকুয়েডরে এক ধরণের ফুল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল যেটি শুধু সেখানে জন্মাত। কিন্তু কিছুদিন আগে গবেষণার জন্য গিয়ে সে
প্রজাতির উদ্ভিদকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জর্জেনসেন প্রায় ১৮৯টি দেশ ঘুরে দেখতে পান যে, ৩ লক্ষ ১০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ ২২ হাজার অর্থাৎ ২২ থেকে ৪৭ শতাংশ প্রজাতির উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এসব বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির গাছপালা শনাক্ত করা একটি কঠিন কাজ। এ কাজের জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। জর্জেনসেন জানান, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। পৃথিবী ব্যাপী এসব বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে বছরে প্রায় ১ কোটি ২১ লক্ষ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। জর্জেনসেন এবং নিগেল পিটম্যান যৌথভাবে এ গবেষণাটি প্রকাশ
করেন। তাঁরা ইকুয়েডরের স্থানীয় ৪ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে গবেষণা চালান। প্রচুর পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেন, সে দেশের প্রায় ৮৩
শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। যে সব প্রজাতি খুব অল্প এলাকা জুড়ে আছে কিংবা যে সব প্রজাতির সংখ্যা খুব নগণ্য সেগুলোকে তিনি হিসাবের মধ্যে
ধরেছেন। গবেষকরা এ গবেষণার ফলকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন। কারণ ইকুয়েডরে উদ্ভিদ জগতের প্রায় সম্পূর্ণ একটি ডাটাবেজ রয়েছে, যা
পার্শ্ববর্তী দেশ পেরুকিংবা কলম্বিয়ায় নেই। এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের সবচেয়ে বড় ক্রগার ন্যাশনাল পার্কের ৬০ ভাগ প্রজাতির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সে দেশের বন বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও সেখানকার ৩০০ প্রকার গাছের মধ্যে ৬০ ভাগ বিলুপ্তি হতে পারে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বলে তারা খুবই আতঙ্কিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বন বিভাগ পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে বিলুপ্ত হতে পারে এমন উদ্ভিদের মধ্যে তাদের জাতীয় ফুল ‘কিং প্রটিয়া’ রয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলের ৭০ ভাগ অদূর ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সে দেশের বন বিভাগ ও বিজ্ঞানীরা। ‘পৃথিবীর উপর উচ্চ তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক রিপোর্টে লিডস্ধসঢ়; বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস থমাস জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লক্ষ প্রজাতির জীবের বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ গবেষণায় জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক থমাস বলেছেন, অবস্থা যদি সে রকম হয় তাহলে তা পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। থমাসের এ গবেষণায় চারটি মহাদেশের প্রাণীকূলের উপর দীর্ঘ সময়ের জরিপের ফলাফল একত্রিত করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘নেচার’-এ তাদের এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষতির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে এমন প্রাণীকূলের মধ্যে ১০ ভাগের অবস্থা খুব শোচনীয়। এর কারণ উচ্চ তাপমাত্রা। ওজন স্তর ক্ষয়ের কারণে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি এসে পড়েছে পৃথিবীর উপর। এর ফলে পৃথিবীর প্রাণী প্রজাতির উপর পড়ছে এর ভয়াবহ প্রভাব। এ অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে। এ গবেষণাটি করতে পৃথিবীর তাবৎ বড় বড় গবেষকদের সময় লেগেছে দু‘বছর। ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীকূলের উপর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যেসব এলাকায় প্রাণীকূল উঁচু পাহাড়ের উপর বসবাস করছে তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আছে এবং নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা তাদের বেশী। কারণ তাপমাত্রা আরো বেড়ে গেলে তারা পাহাড়ের আরো উপরে উঠে যেতে পারবে। তারা যত উপরে উঠবে তত শীতের কাছাকাছি পৌঁছবে। আর এতে কিছু পাখির বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এসব পাখি অতি দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় উড়তে পারে। তাই গাছপালা এবং অন্যান্য স্থল প্রাণীদের বিলুপ্তির আশঙ্কা বেশি। কারণ তাদের স্থানান্তরের সুযোগ নেই। গবেষণায় বলা হয়েছে অষ্ট্রেলিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ২৪ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ৩ প্রকারের প্রজাতির খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। বাকি ২১ প্রজাতির মধ্যে প্রায় অর্ধেক উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বিলুপ্ত হতে পারে। তারপর আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ৪ ভাগের এক ভাগ পক্ষীকূলের বিলুপ্তি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।